নিজস্ব প্রতিবেদক: | বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
পরম মমতায় প্রকৃতির সবটুকু রূপ গায়ে মেখেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ক্যাম্পাস হিসেবে তাইতো অপূর্ব সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয়। নগরজীবনের যান্ত্রিকতায় পিষ্ট শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে যেখানে প্রকৃতি ও পরিবেশটা পুরোপুরি গ্রামীণ আবহে তৈরি। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথের প্রধান সড়কটি আলাদা নজর কাড়ে সবার। দেখলে মনে হয় যেন পিচঢালা সড়কের বুক চিরে রূপের পসরা সাজিয়ে বসেছে সবুজ প্রকৃতি।
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের ইন্টারসেকশন থেকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক পর্যন্ত এই সড়কের দুই ধারে সবুজ অরণ্য আর ছায়াতরুর প্রাণ প্রাচুর্যের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে অনন্য এক পরিচয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা এ সড়কের এই সৌন্দর্যের পেছনে রয়েছে একজনের নিঃস্বার্থ পরিশ্রম। যিনি ছিলেন আপাদমস্তক মাটির মানুষ। বৃক্ষ প্রেম ছিলো তার পুরোটা অস্তিত্ব জুড়ে। তিনি অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ খান। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।
আশির দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আসেন। সহজ, সরল, নির্লোভ আর সাদামাটা জীবন যাপন তাকে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। বিলাসী জীবন তাকে কখনো টানেনি। বছর জুড়ে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিজ হাতে গাছের পরিচর্যা করতেন। তার হাত ধরেই চবির প্রধান সড়ক পায় সবুজের আলিঙ্গন। কখনো পায়ে হেঁটে আবার কখনো রিকশায় চড়ে তিনি এসব দেখভাল করতেন।
পাহাড়ে ঘেরা ক্যাম্পাসের উঁচুনিচু টিলায় লাগানো গাছে পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতে তিনি পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে পানির ধারা প্রবাহিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন।
একবার এক শিক্ষার্থী রোপণ করা একটি গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ছিল, অধ্যাপক আব্দুল আজিজ তা কোনোভাবে দেখে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি গিয়ে ঐ শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘বাবা একি করছ তুমি? তুমি তো গাছের পাতা ছিড়ছ না, যেন আমার কলিজা ধরে টান দিচ্ছো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে মনে হয় পর্যটন স্পট দিয়ে যাচ্ছি। সড়কের দুই পাশে ঘন গাছের সারি। দেখতে খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে বর্ষাকালে দেখতে অপরূপ লাগে।
আরেক শিক্ষার্থী মিশিপ্রু মারমা বলেন, সবুজ বৃক্ষ আর পাহাড়ে ঘেরা অপূর্ব সুন্দর চবি। যার প্রধান সড়কও ব্যতিক্রম নয়। সারি সারি সবুজ গাছ যেন অভ্যর্থনার ঢালা সাজিয়ে ডাকছে প্রতিটি মুহূর্ত। সকাল কিংবা বিকেলে প্রায়ই বন্ধুদের সঙ্গে পায়ে হেঁটে আবার কখনো সাইকেলে বেরিয়ে পড়ি। এ অনুভূতির সত্যিই অসাধারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আজমত বলেন, ড. আব্দুল আজিজ স্যারকে না দেখেই ভালোবাসতাম। কারণ তার সব ভালো গুণের জন্য তিনি ছিলেন সবার চেয়ে আলাদা। বিশেষ করে, প্রকৃতির সঙ্গে তিনি মিশেছেন একান্ত আপন করে। মনের মতো করে সাজিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়কে। যার প্রমাণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সড়ক শিক্ষক ডরমিটরি, আবাসিক এলাকাসহ অনেক কিছু। ফলে উপাচার্য হয়েও তিনি বেশি খ্যাতি পান ‘বৃক্ষাচার্য’ হিসেবে।
নির্মোহ, বিনয়ী, জ্ঞানপিপাসু এবং বৃক্ষপ্রেমী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল আজিজ খান বার্ধক্যজনিত রোগে ৮১ বছর বয়সে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ চলে যান না ফেরার দেশে।
Posted ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ajkerograbani.com | Salah Uddin